ঋণ কেলেঙ্কারিতে এফএএস ফাইন্যান্সের ৪ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ

ঋণ কেলেঙ্কারিতে এফএএস ফাইন্যান্সের ৪ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রায় ২০টি কাগুজে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ১৩শ কোটি টাকা ঋণ প্রদানে সহায়তার অভিযোগে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চার পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। যা বিকেল পর্যন্ত চলবে বলে জানা গেছে।

আজ এফএএস ফাইন্যান্সসহ আরও তিন প্রতিষ্ঠানের মোট ১০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক অঞ্জন কুমার ঘোষ, প্রদীপ কুমার নন্দী, স্বতন্ত্র পরিচালক বীরেন্দ্র কুমার সোম ও পরিচালক মোস্তফা সাহেব উপস্থিত হয়ে তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন।

এছাড়া আরও যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে তারা হলেন- এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক সত্য গোপাল পোদ্দার, মোস্তফা আমিনুর রশীদ, গ্রীনলাইন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাস, জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি এবং তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্স লিমিটেডের মো. মুনিরুল ইসলাম।

একই অভিযোগে সোম ও মঙ্গলবার এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক এমডি ও ডিএমডিসহ মোট ১৭ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। গত ৮ আগস্ট এফএএস ফাইন্যান্সের শীর্ষ ২৬ কর্মকর্তা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চারজনসহ মোট ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক।

অভিযোগ রয়েছে, ঋণ আবেদন গ্রহণ করেই যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো মর্টগেজ গ্রহণ ব্যতিরেকে প্রায় ২০টি কাগুজে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ১৩শ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্টরা। কাগুজে প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এসএ এন্টারপ্রাইজ, মুন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেড, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দিয়া শিপিং লিমিটেড, নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, মেসার্স বর্ণ, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, দ্রিনান অ্যাপারেলস, অ্যান্ড বি এন্টারপ্রাইজ, এমার এন্টারপ্রাইজ , জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ , তামিম অ্যান্ড তালহা, হাল ইন্টারন্যাশনাল, মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেড, আর্থস্কোপ এবং এমটিবি মেরিন।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ঋণের নামে অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা। জিজ্ঞাসাবাদে আত্মসাতের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলছে।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলোচিত পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। তার কিছুদিন পর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ১৫টি মামলা করে দুদক। যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ভুয়া নামে ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা এবং ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করে দুদক।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

কোম্পানিগুলো হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন